
🔰আমরা সাধারনত অনেকে মিলাদুন্নাবী পালন করি এই মিলাদুন্নাবী পালন কি শরিয়ত সম্মত কিনা তা জেনে নিই চলুন,
মিলাদুন্নবী পালনের বিধান :
লেখক : শায়খ ড. সালেহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান
সমস্ত প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য, কল্যাণ ও শান্তি বর্ষিত হোক আমাদের নবীজী মুহাম্মাদ(সঃ) এবং তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীগণের ওপর।
কুরআন এবং সুন্নাহতে খুব স্পষ্টভাবে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের নির্দেশাবলী অনুসরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং ধর্মীয় ব্যাপারে নতুন কিছু সূচনা করাকে স্পষ্টত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন: “বলুন [হে নবী]: যদি তোমরা সত্যিই আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেবেন।” (সূরা আলে ইমরান, ৩:৩১) “তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল হয়েছে, তোমরা তার [কুরআন ও সুন্নাহ] অনুসরণ কর, আর তাঁকে [আল্লাহ] ছাড়া আর কোন আউলিয়ার [সেই সব সত্তা যারা আল্লাহর সাথে শরীক করার নির্দেশ দেয়] অনুসরণ করো না…” (সূরা আল আরাফ, ৭:৩) “আর এটিই আমার সরল-সঠিক পথ, অতএব তোমরা এ পথেই চল এবং অন্যান্য পথে পরিচালিত হয়োনা, কেননা সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে।…” (সূরা আল আনআম, ৬:১৫৩) এবং নবীজী(সঃ) বলেছেন: “সবচেয়ে সত্য ভাষণ হচ্ছে আল্লাহর কিতাব, এবং সর্বশ্রেষ্ঠ দিকনির্দেশনা হচ্ছে মুহাম্মাদের দিকনির্দেশনা, আর সবচেয়ে খারাপ বিষয় হচ্ছে (দ্বীনের ব্যাপারে) নব উদ্ভাবিত বিষয়।” এবং তিনি(সঃ) বলেছেন: “যে কেউই আমাদের এই দ্বীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করবে যা এর কোন অংশ নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত হবে।” (বুখারী ও মুসলিম) মুসলিম শরীফে অপর এক রিওয়ায়াতে এসেছে: “যে কেউই এমন কিছু করবে যা আমাদের এই দ্বীনের সাথে মেলে না, তবে তা প্রত্যাখ্যাত হবে।”
মানুষ কর্তৃক উদ্ভাবিত এরূপ তিরস্কারযোগ্য নব উদ্ভাবনের মধ্যে একটি হচ্ছে রবিউল আউয়াল মাসে নবীজীর(সঃ) জন্মোৎসব বা মিলাদুন্নবী উদযাপন। লোকে বিভিন্নভাবে এই উপলক্ষকে উদযাপন করে থাকে: কেউ কেউ এ উপলক্ষে জমায়েত হয়ে নবীজীর জন্মের ঘটনা আলোচনা করে এবং বক্তৃতা ও কাসীদা পড়ে থাকে। কেউ বা মিষ্টি-খাবার প্রভৃতি তৈরী করে বিতরণ করে। কেউ কেউ মসজিদে তা উদযাপন করে, কেউ বা উদযাপন করে বাড়িতে।আর কেউ কেউ এ সবকিছুকে ছাড়িয়ে গিয়ে এধরনের মজলিসে হারাম ও দূষণীয় কাজের সমাবেশ ঘটায়: যেমন নারী ও পুরুষের মেলামেশা, নাচ ও গান-বাজনা, এবং বিভিন্ন শিরকী কাজ যেমন নবীজীর সাহায্য চাওয়া, তাঁকে ডাকা এবং শত্রুর বিরুদ্ধে তাঁর সাহায্য চাওয়া ইত্যাদি। এই উদযাপনের প্রকৃতি যেমনই হোক না কেন আর পালনকারীদের নিয়ত যাই হোক না কেন, এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে এই অনুষ্ঠান একধরনের বিদাত, মুসলিমদের দ্বীনকে নষ্ট করার জন্য ফাতিমীয় শিয়ারা এই হারাম বিদাতের প্রচলন ঘটায় প্রথম তিনটি শ্রেষ্ঠ প্রজন্মের সময়কাল অতিবাহিত হওয়ার পর। এদের পরে সর্ব প্রথম এই মিলাদুন্নবী উদযাপন করে হিজরী ষষ্ঠ শতকের শেষে এবং সপ্তম শতকের প্রারম্ভে ইরবিলের সম্রাট আল-মুযাফফার আবু সাঈদ কাওকাবূরি – যেমনটি বর্ণনা করেছেন ইবনে খালকান এবং অন্যান্য ঐতিহাসিকগণ। আবু শামা বলেন: মসুলে সর্বপ্রথম এটা চালু করেন শেখ উমার ইবনে মুহাম্মাদ আল মালা, যিনি ছিলেন একজন সুপরিচিত ধার্মিক ব্যক্তি। পরবর্তীতে ইরবিলের সম্রাট এবং অন্যান্যরা তার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে।
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে আল হাফিয ইবনে কাসীর আবু সাঈদ কাওকাবূরি সম্পর্কে লিখতে গিয়ে বলেন: “তিনি রবিউল আউয়াল মাসে মিলাদ উদযাপন করতেন এবং এ উপলক্ষে বিশাল উৎসবের আয়জন করতেন…” ওয়াফিয়াত আল আ’য়ান গ্রন্থে ইবনে খালকান বলেন: “সফর মাসের পয়লা তারিখ থেকেই তারা গম্বুজগুলোকে বিভিন্ন রকমের জমকালো সজ্জায় সজ্জিত করত, প্রতি গম্বুজেই গায়ক, পুতুল নাচিয়ে এবং বাদকদের একটি করে দল থাকত, এবং কোন গম্বুজই এ থেকে বাদ যেত না। লোকেরা এসময় কাজকর্ম বাদ দিয়ে ঘুরেফিরে এই উৎসব দেখত। এমনিভাবে মিলাদের ঠিক দুইদিন আগে তারা অনেক উট, গরু ও ভেড়া নিয়ে আসত, যা বর্ণনাতীত, তারা ঢোল, সঙ্গীত এবং বাদ্যসহকারে এগুলোকে চত্বরে নিয়ে আসত…মিলাদের রাত্রিতে কবিদের নাশীদ পাঠ চলত রাজপ্রাসাদে।”এই হচ্ছে মিলাদুন্নবী উদযাপনের উৎস। সামপ্রতিক কালে এই বিদাতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে অনর্থক রং-তামাশা, অত্যধিক সাজসজ্জা এবং অর্থ ও সময়ের অপচয়, যে সম্পর্কে আল্লাহ পাক কোন হুকুমই নাযিল করেননি।মুসলিমদের উচিৎ সুন্নাতকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং এই বিদাতের পরিসমাপ্তি ঘটানো, যেকোন কাজের ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান না জানা পর্যন্ত তাদের উচিৎ নয় সেটা সম্পাদন করা।
মিলাদুন্নবী উদযাপন সংক্রান্ত শরীয়াতের বিধান:
মিলাদুন্নবী উদযাপন হারাম এবং বেশ কয়েকটি কারণে পরিত্যাজ্য:
মিলাদুন্নবী উদযাপন হারাম এবং বেশ কয়েকটি কারণে পরিত্যাজ্য:
প্রথম কারণ: এটি রাসূলুল্লাহ(সঃ) কিংবা তাঁর খলীফাদের সুন্নাত ছিল না। ফলে এটি একটি নিষিদ্ধ নব উদ্ভাবন, কেননা নবীজী(সঃ) বলেছেন: “আমি তোমাদেরকে আমার এবং আমার পরবর্তী সঠিক পথপ্রাপ্ত খলীফাদের অনুসরণের ব্যাপারে তাগিদ দিচ্ছি; তোমরা একে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে থাক। [দ্বীনের মধ্যে] নব উদ্ভাবিত বিষয় সম্পর্কে সাবধান হও, কেননা প্রতিটি নবোদ্ভাবিত বিষয়ই বিদাত, এবং প্রতিটি বিদাতই হচ্ছে পথভ্রষ্টতা।” (আহমাদ, তিরমিযী)মিলাদুন্নবী একটি বিদাত যা মুসলিমদের দ্বীনকে নষ্ট করার জন্য ফাতিমীয় শিয়ারা চালু করেছিল প্রথম তিনটি শ্রেষ্ঠ প্রজন্মের সময়কাল অতিবাহিত হওয়ার পর। কেউ যদি আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে এমন কিছু করে যা রাসূল(সঃ) করেননি কিংবা করতে বলেননি এবং তার উত্তরসূরী খলীফারাও করেন নি, তাহলে তার অর্থ এই দাঁড়ায় যে সে দাবী করছে যে রাসূল(সঃ) মানুষের কাছে পরিপূর্ণভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি ব্যাখ্যা করেননি [নাউযুবিল্লাহ], ফলে সে আল্লাহর এই আয়াতকে অস্বীকার করে: “আজ আমি, তোমাদের দ্বীনকে তোমাদের জন্য পূর্ণ করে দিলাম।” (সূরা আল মায়িদাহ, ৫:৩) কারণ সে দ্বীনের মধ্যে বাড়তি কিছু সংযোজন করছে এবং দাবী করছে যে তা দ্বীনের অংশ অথচ রাসূল(সঃ) তা [আল্লাহর পক্ষ থেকে] নিয়ে আসেননি।
দ্বিতীয় কারণ: মিলাদুন্নবী উদযাপনের দ্বারা খ্রীস্টানদের অনুসরণ করা হয়, কেননা তারা মসীহের(আঃ) জন্মদিন পালন করে। আর তাদের অনুসরণ করা চূড়ান্ত হারাম কাজ। হাদীসে আমাদেরকে কাফিরদের অনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং তাদের থেকে ভিন্ন হতে আদেশ করা হয়েছে। নবীজী(সঃ) বলেছেন: “যে কেউই কোন জাতির অনুসরণ করে, সে তাদেরই একজন হিসেবে পরিগণিত।”(আহমদ, আবু দাঊদ) এবং তিনি বলেন: “মুশরিকদের থেকে ভিন্ন হও।”(মুসলিম)- বিশেষত এই নির্দেশ সেসব বিষয়ের ক্ষেত্রে যা তাদের ধর্মীয় নিদর্শন এবং আচার অনুষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত।
তৃতীয় কারণ: বিদাত এবং খ্রীস্টানদের অনুসরণ করার মত হারাম কাজ হওয়া ছাড়াও মিলাদুন্নবী উদযাপন অতিরঞ্জন এবং নবীজীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ির পথ উন্মোচন করে, যা কিনা আল্লাহকে ডাকার পরিবর্তে নবীজীকে ডাকা এবং তাঁর সাহায্য চাওয়া পর্যন্ত রূপ নিতে পারে, যেমনটি বিদাতী এবং মিলাদ পালনকারীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় ঘটে থাকে, যখন তারা আল্লাহর পরিবর্তে রাসূলকে(সঃ) ডাকে, তাঁর সহযোগিতা চায় এবং “কাসীদায়ে বুরদা” জাতীয় শিরকপূর্ণ প্রশংসাসূচক কাসীদা আউড়ে থাকে। নবীজী(সঃ) তাঁর প্রশংসার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে বলেছেন: “আমাকে এমনভাবে প্রশংসা করো না যেমনটি খ্রীস্টানরা মরিয়মের পুত্রকে করে থাকে। কেননা আমি তাঁর বান্দাহ মাত্র। সুতরাং [আমার সম্পর্কে] বল: আল্লাহর বান্দাহ ও রাসূল।” (বুখারী)অর্থাৎ খ্রীস্টানরা যেমন মসীহের(আঃ) প্রশংসার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর পরিবর্তে তার ইবাদত করা শুরু করে দিয়েছে, তোমরা আমার প্রশংসা করতে গিয়ে তেমনটি করো না। আল্লাহ তাদেরকে এ ব্যাপারে নিষেধ করে আয়াত নাযিল করেছেন: “হে আহলে কিতাব! তোমরা তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য ছাড়া অন্য কথা বলো না। মরিয়মের পুত্র মসীহ ঈসা তো আল্লাহর রাসূল ও মরিয়মের নিকট প্রেরিত তাঁর বাণী ছাড়া আর কিছুই নন, এবং আল্লাহর সৃষ্টি করা এক রূহ।…” (সূরা আন নিসা, ৪:১৭১) আমাদের নবীজী(সঃ) তাঁর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতে আমাদেরকে নিষেধ করেছেন, পাছে না আমাদের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটে, যা তাদের ক্ষেত্রে ঘটেছে, তাই তিনি(সঃ) বলেছেন: “অতিরঞ্জনের ব্যাপারে সাবধান! কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা অতিরঞ্জনের কারণেই ধ্বংস হয়েছিল।” (নাসাঈ, আলবানী কর্তৃক সহীহ হিসেবে স্বীকৃত)
চতুর্থ কারণ: মিলাদুন্নবীর এই বিদাত উদযাপন অন্যান্য বিদাতের দ্বারকে উন্মুক্ত করে এবং সুন্নাত থেকে বিমুখ করে দেয়। তাই বিদাতপন্থীদেরকে দেখা যায় বিদাতের ক্ষেত্রে খুব উৎসাহী আর সুন্নাত পালনের ক্ষেত্রে ঢিলেঢালা; তারা একে ঘৃণা করে এবং সুন্নাতের অনুসারীদেরকে শত্রুজ্ঞান করে, শেষ পর্যন্ত তাদের গোটা ধর্মই পরিণত হয় বাৎসরিক বিদাতী অনুষ্ঠানাদি এবং মিলাদের সমষ্টিতে। এভাবে তারা বিভিন্ন মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করে এবং সাহায্যের জন্য আল্লাহর পরিবর্তে এইসব তথাকথিত বুজুর্গ ব্যক্তিদের ডাকে, তারা ধারণা করে যে এইসব ব্যক্তি উপকার কিংবা ক্ষতি বয়ে আনতে সক্ষম, এমনিভাবে তারা আল্লাহর দ্বীন থেকে সরে গিয়ে জাহেলিয়াতের যুগের লোকেদের ধর্মে প্রত্যাবর্তন করে, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:ভাবার্থ: “এবং তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কিছুর উপাসনা করে যা তাদের কোন ক্ষতিও করতে পারে না এবং কোন উপকারও করতে পারে না। তারা বলে: এরা আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী।” (সূরা ইউনুস, ১০:১৮)ভাবার্থ: “…আর যারা আল্লাহকে ছেড়ে অপরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করেছে, তারা বলে: আমরা তো এদের উপাসনা করি কেবল এজন্য যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছে দেয়…” (সূরা আয যুমার, ৩৯:৩)
মিলাদ উদযাপনকারীদের ধোঁকাপূর্ণ যুক্তি সম্পর্কে আলোচনা:
যারা মনে করে যে এই বিদাতটি চালু রাখা দরকার, তারা ধোঁয়াটে সব যুক্তি উত্থাপন করে থাকে যা কিনা ওজনে মাকড়সার জালের চেয়েও হালকা। এ সমস্ত ত্রুটিপূর্ণ যুক্তির জবাব এভাবে দেয়া যায়:
দ্বিতীয় কারণ: মিলাদুন্নবী উদযাপনের দ্বারা খ্রীস্টানদের অনুসরণ করা হয়, কেননা তারা মসীহের(আঃ) জন্মদিন পালন করে। আর তাদের অনুসরণ করা চূড়ান্ত হারাম কাজ। হাদীসে আমাদেরকে কাফিরদের অনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং তাদের থেকে ভিন্ন হতে আদেশ করা হয়েছে। নবীজী(সঃ) বলেছেন: “যে কেউই কোন জাতির অনুসরণ করে, সে তাদেরই একজন হিসেবে পরিগণিত।”(আহমদ, আবু দাঊদ) এবং তিনি বলেন: “মুশরিকদের থেকে ভিন্ন হও।”(মুসলিম)- বিশেষত এই নির্দেশ সেসব বিষয়ের ক্ষেত্রে যা তাদের ধর্মীয় নিদর্শন এবং আচার অনুষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত।
তৃতীয় কারণ: বিদাত এবং খ্রীস্টানদের অনুসরণ করার মত হারাম কাজ হওয়া ছাড়াও মিলাদুন্নবী উদযাপন অতিরঞ্জন এবং নবীজীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ির পথ উন্মোচন করে, যা কিনা আল্লাহকে ডাকার পরিবর্তে নবীজীকে ডাকা এবং তাঁর সাহায্য চাওয়া পর্যন্ত রূপ নিতে পারে, যেমনটি বিদাতী এবং মিলাদ পালনকারীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় ঘটে থাকে, যখন তারা আল্লাহর পরিবর্তে রাসূলকে(সঃ) ডাকে, তাঁর সহযোগিতা চায় এবং “কাসীদায়ে বুরদা” জাতীয় শিরকপূর্ণ প্রশংসাসূচক কাসীদা আউড়ে থাকে। নবীজী(সঃ) তাঁর প্রশংসার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে বলেছেন: “আমাকে এমনভাবে প্রশংসা করো না যেমনটি খ্রীস্টানরা মরিয়মের পুত্রকে করে থাকে। কেননা আমি তাঁর বান্দাহ মাত্র। সুতরাং [আমার সম্পর্কে] বল: আল্লাহর বান্দাহ ও রাসূল।” (বুখারী)অর্থাৎ খ্রীস্টানরা যেমন মসীহের(আঃ) প্রশংসার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর পরিবর্তে তার ইবাদত করা শুরু করে দিয়েছে, তোমরা আমার প্রশংসা করতে গিয়ে তেমনটি করো না। আল্লাহ তাদেরকে এ ব্যাপারে নিষেধ করে আয়াত নাযিল করেছেন: “হে আহলে কিতাব! তোমরা তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য ছাড়া অন্য কথা বলো না। মরিয়মের পুত্র মসীহ ঈসা তো আল্লাহর রাসূল ও মরিয়মের নিকট প্রেরিত তাঁর বাণী ছাড়া আর কিছুই নন, এবং আল্লাহর সৃষ্টি করা এক রূহ।…” (সূরা আন নিসা, ৪:১৭১) আমাদের নবীজী(সঃ) তাঁর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতে আমাদেরকে নিষেধ করেছেন, পাছে না আমাদের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটে, যা তাদের ক্ষেত্রে ঘটেছে, তাই তিনি(সঃ) বলেছেন: “অতিরঞ্জনের ব্যাপারে সাবধান! কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা অতিরঞ্জনের কারণেই ধ্বংস হয়েছিল।” (নাসাঈ, আলবানী কর্তৃক সহীহ হিসেবে স্বীকৃত)
চতুর্থ কারণ: মিলাদুন্নবীর এই বিদাত উদযাপন অন্যান্য বিদাতের দ্বারকে উন্মুক্ত করে এবং সুন্নাত থেকে বিমুখ করে দেয়। তাই বিদাতপন্থীদেরকে দেখা যায় বিদাতের ক্ষেত্রে খুব উৎসাহী আর সুন্নাত পালনের ক্ষেত্রে ঢিলেঢালা; তারা একে ঘৃণা করে এবং সুন্নাতের অনুসারীদেরকে শত্রুজ্ঞান করে, শেষ পর্যন্ত তাদের গোটা ধর্মই পরিণত হয় বাৎসরিক বিদাতী অনুষ্ঠানাদি এবং মিলাদের সমষ্টিতে। এভাবে তারা বিভিন্ন মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করে এবং সাহায্যের জন্য আল্লাহর পরিবর্তে এইসব তথাকথিত বুজুর্গ ব্যক্তিদের ডাকে, তারা ধারণা করে যে এইসব ব্যক্তি উপকার কিংবা ক্ষতি বয়ে আনতে সক্ষম, এমনিভাবে তারা আল্লাহর দ্বীন থেকে সরে গিয়ে জাহেলিয়াতের যুগের লোকেদের ধর্মে প্রত্যাবর্তন করে, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:ভাবার্থ: “এবং তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কিছুর উপাসনা করে যা তাদের কোন ক্ষতিও করতে পারে না এবং কোন উপকারও করতে পারে না। তারা বলে: এরা আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী।” (সূরা ইউনুস, ১০:১৮)ভাবার্থ: “…আর যারা আল্লাহকে ছেড়ে অপরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করেছে, তারা বলে: আমরা তো এদের উপাসনা করি কেবল এজন্য যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছে দেয়…” (সূরা আয যুমার, ৩৯:৩)
মিলাদ উদযাপনকারীদের ধোঁকাপূর্ণ যুক্তি সম্পর্কে আলোচনা:
যারা মনে করে যে এই বিদাতটি চালু রাখা দরকার, তারা ধোঁয়াটে সব যুক্তি উত্থাপন করে থাকে যা কিনা ওজনে মাকড়সার জালের চেয়েও হালকা। এ সমস্ত ত্রুটিপূর্ণ যুক্তির জবাব এভাবে দেয়া যায়:
প্রথম ভ্রান্ত যুক্তি: তারা দাবী করে যে এটা নবীজীর(সঃ) প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন: এর জবাবে বলা যায় যে নবীজীকে শ্রদ্ধা করার উপায় হচ্ছে তাঁর আনুগত্য করা, তিনি যেমনটি আদেশ করেছেন, তেমনটি করা আর তিনি যা নিষেধ করেছেন তা পরিত্যাগ করা; বিদাত, কল্পকাহিনী এবং পাপাচারের মাধ্যমে তাঁকে সম্মান করতে বলা হয়নি। মিলাদুন্নবী উদযাপন এরকমই এক দূষণীয় কাজ, কারণ এটা একধরনের পাপাচার। নবীজীকে(সঃ) যারা সবচেয়ে বেশী শ্রদ্ধা করেছিলেন, তারা ছিলেন সাহাবীগণ, যেমনটি উরওয়াহ ইবনে মাসউদ কুরাঈশদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন: “হে লোকসকল! আল্লাহর কসম আমি রাজরাজড়াদের দেখেছি। আমি সিজার, কায়সার এবং নেগাসের দরবারে গিয়েছি, কিন্তু আল্লাহর শপথ, আমি এমন কোন রাজা দেখিনি যার সাথীরা তাকে এতটা সম্মান করে, যতটা গভীরভাবে মুহাম্মাদকে(সঃ) তাঁর সাথীরা শ্রদ্ধা করে। আল্লাহর শপথ তাঁর কোন থুথুও মাটিতে পড়ত না, বরং তাঁর সাথীরা হাত দিয়ে ধরে নিতেন এবং তা তাদের চেহারা ও ত্বকে বুলিয়ে নিতেন। যদি তিনি তাদেরকে কোন আদেশ দেন, তবে তারা সেটা পালন করার জন্য দ্রুতগামী হয়। তাঁর ওযুর সময় তারা ওযুর পানি গ্রহণ করার জন্য প্রায় লড়াই করতে উদ্যত হয়। তিনি কথা বললে তাঁর উপস্থিতিতে তারা তাদের কন্ঠস্বরকে নীচু করে ফেলে। এবং তারা গভীর শ্রদ্ধাবোধের কারণে তাঁর দিকে সরাসরি তাকিয়েও থাকে না।” (বুখারী)তাঁর প্রতি এত শ্রদ্ধা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা [অর্থাৎ সাহাবীরা] কখনও মিলাদুন্নবীর দিনকে ঈদ হিসেবে পালন করেননি। যদি ইসলামে একে পালন করার উৎসাহ দেয়া হত, তবে তারা কিছুতেই একে অবহেলা করতেন না।
দ্বিতীয় ভ্রান্ত যুক্তি: বহু দেশের বহু লোকেই এটা পালন করে থাকে:এর জবাবে বলা যায় যে দলীল-প্রমাণ হিসেবে শুধু সেটাই উপস্থাপন করা যাবে যা নবীজীর(সঃ) কাছ থেকে আগত বলে প্রমাণিত হবে, আর নবীজীর(সঃ) কাছ থেকে আগত বলে যা প্রমাণিত, তা হচ্ছে এই যে সকল বিদাতই সাধারণভাবে হারাম, আর এটা নিঃসন্দেহে একটি বিদাত। লোকেদের রীতিনীতি যদি দলীল-প্রমাণ বিরোধী হয়, তবে তা গ্রহণযোগ্য নয়, তা যতসংখ্যক লোকই তা পালন করুক না কেন। আল্লাহ বলেন: “আর আপনি যদি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথা মেনে চলেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করে দেবে…” (সূরা আল আনআম, ৬:১১৬) এতদসত্ত্বেও আলহামদুলিল্লাহ, প্রতি যুগেই এমনসব মানুষ ছিলেন যারা এই বিদাতকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং স্পষ্টত ঘোষণা দিয়েছেন যে এটি বাতিল প্রথা। সত্যকে ব্যাখ্যা করার পরও যারা এটি পালন করতে থাকে তাদের কাছে কোন প্রমাণ নেই।এই উপলক্ষকে যারা প্রত্যাখ্যান করেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন: শাইখুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া(রঃ), তাঁর ‘ইক্বতিদাউস সিরাতিল মুসতাক্বিম’ বইতে; ইমাম আল শাতিবী, আল-ই’তিসামে; ইবনুল হাজ্জ, আল মাদাখিল বইতে; শায়খ তাজুদ্দিন আলী ইবন উমার আল লাখামী, যিনি কিনা এই প্রথার বিরুদ্ধে গোটা একটি বই লিখেছেন; শায়খ মুহাম্মাদ বাশীর আল সাহসাওয়ানী আল হিনদী, তাঁর সিয়ানাতুল ইনসান কিতাবে; সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ রশীদ রিদা এই বিষয়ের ওপর একটি বিশেষ নিবন্ধ লিখেছেন; শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আল আশ-শায়খ এ বিষয়ে বিশেষ নিবন্ধ লিখেছেন; শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায; এবং অন্যান্যরা; যারা এখনও প্রতিবছরই পত্রিকা এবং সাময়িকীতে এসম্পর্কে লিখে যাচ্ছেন এবং একে প্রত্যাখ্যান করে যাচ্ছেন, এমন এক সময়ে যখন এ বিদাত পালিত হচ্ছে।
তৃতীয় ভ্রান্ত যুক্তি: তারা দাবী করে যে তারা মিলাদ পালনের দ্বারা নবীজীর(সঃ) স্মৃতিকে উজ্জ্বল করে রাখছে:এর জবাবে বলা যায় যে মুসলিমরা নবীজীর(সঃ) স্মৃতিকে সর্বক্ষণই উজ্জ্বল করে রাখে, যেমন তাঁর নাম উচ্চারিত হয় আযানে, ইক্বামাতে এবং খুতবায়, ওযুর পর কালেমা শাহাদাৎ পাঠের সময়, সালাতের মধ্যে দুআয় এবং তাঁর নাম উচ্চারিত হওয়ার সময় যখন কিনা দরূদ পাঠ করা হয়, এবং যখনই কোন মুসলিম কোন ওয়াজিব অথবা মুস্তাহাব কাজ পালন করে যা কিনা নবীজী(সঃ) কর্তৃক নির্দেশিত হয়েছে। এই সকল উপায়ে একজন মুসলিম তাঁকে স্মরণ করে এবং সে যে উত্তম কাজটি করে, তার সওয়াব নবীজীও(সঃ) পেয়ে যান। এভাবেই একজন মুসলিম তাঁর স্মৃতিকে সতেজ রাখে এবং জীবনের প্রতিটি দিনে ও রাতেই তাঁর সাথে সংযোগ রক্ষা করে আল্লাহ কর্তৃক অনুমোদিত পন্থায়, শুধু মিলাদের দিন বিদাতী ও সুন্নত বিরোধী প্রক্রিয়ায় নয়; কেননা এর দ্বারা রাসূলের(সঃ) সাথে দূরত্ব কেবল বেড়েই যায় এবং রাসূল(সঃ) এ কারণে তাকে প্রত্যাখ্যান করবেন।বিদাতপূর্ণ উৎসবের কোন প্রয়োজন রাসূলের(সঃ) নেই, কেননা স্বয়ং আল্লাহই তাঁকে শ্রদ্ধেয় ও সম্মানিত করেছেন, যেমনটি তিনি ঘোষণা দেন: “আর আমি তোমার স্মরণকে সমুন্নত করেছি।” (সূরা ইনশিরাহ, ৯৪:৪) আর আযান, ইক্বামত কিংবা খুতবায় এমন কোন সময় আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয়না যখনই তার পরপরই রাসূলের(সঃ) নাম না উচ্চারিত হয়। শ্রদ্ধা, ভালবাসা প্রদর্শন এবং তাঁর স্মৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য এটাই যথেষ্ট, এটাই তাঁকে অনুসরণ করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে উৎসাহব্যঞ্জক।আল্লাহ কুরআনে রাসূলের(সঃ) জন্মকাহিনী আলোচনা করেননি, বরং তিনি তাঁর মিশনের কথা উল্লেখ করেছেন: “যথার্থই আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন যে তিনি তাদের কাছে তাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন…” (সূরা আলে ইমরান, ৩:১৬৪) “তিনিই নিরক্ষর জাতির মধ্য থেকে তাদেরই একজনকে রাসূল বানিয়ে প্রেরণ করেছেন…” (সূরা আল জুমুআহ, ৬৪:২)
চতুর্থ ভ্রান্ত যুক্তি: তারা দাবী তুলতে পারে যে মিলাদুন্নবী উদযাপন একজন জ্ঞানী ও ন্যায়বিচারক রাজার দ্বারা প্রচলিত হয়েছে যিনি এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চেয়েছেন।আমাদের জবাব হচ্ছে বিদাত কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়, তা সে যে কেউই পালন করুক না কেন। ভাল নিয়্যতের দ্বারা কোন খারাপ কাজ করা জায়েয হয় না, আর যদিও বা একজন লোক জ্ঞানী ও সৎকর্মশীল হিসেবে মৃত্যুবরণ করেন, তার মানে এই নয় যে তিনি কোন ভুল করতে পারেন না।
পঞ্চম ভ্রান্ত যুক্তি: তারা দাবী করে মিলাদুন্নবী উদযাপন “বিদাতে হাসানা” বা উত্তম বিদাতের আওতায় পড়ে, কেননা এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নবীজীকে(সঃ) প্রেরণের জন্য আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করা।আমাদের জবাব হচ্ছে: বিদাতের মধ্যে উত্তম বলে কিছু নেই। নবীজী(সঃ) বলেছেন: “যে কেউই আমাদের এই দ্বীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করবে যা এর কোন অংশ নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত হবে।” (বুখারী) এবং তিনি(সঃ) বলেছেন: “প্রতিটি বিদাতই পথভ্রষ্টতা।” (আহমাদ, তিরমিযী)বিদাতের ক্ষেত্রে শরীয়াতের বিধান হচ্ছে এই যে সকল বিদাতই পথভ্রষ্টতার নামান্তর, কিন্তু তাদের ভ্রান্ত যুক্তির কারণে তাদের ধারণা এই যে সব বিদাতই দূষণীয় নয়, বরং কিছু বিদাত আছে যেগুলো উত্তম। শারহুল আরবাঈন বইতে হাফিয ইবনে রজব বলেছেন: “নবীজীর(সঃ) বক্তব্য: ‘প্রতিটি বিদাতই পথভ্রষ্টতা’ একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু ব্যাপক উক্তি যা সবকিছুকেই আওতাভুক্ত করে; এটি দ্বীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি। এটা তাঁর এই বাণীর মত: ‘যে কেউই আমাদের এই দ্বীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করবে যা এর কোন অংশ নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত হবে।’ (বুখারী, আল ফাতহ) যে কেউই এমন নতুন কিছু উদ্ভাবন করে ইসলামের সাথে একে সম্পৃক্ত করতে চায়, যার ভিত্তি এই দ্বীনে নেই, তবে সেটা পথভ্রষ্টতা এবং ইসলামের সাথে এর কোনই সম্পর্ক নেই, তা আক্বীদাহ সংক্রান্তই হোক আর বাহ্যিক বা আভ্যন্তরীণ কথা ও কাজ সংক্রান্তই হোক না কেন।” (জামি’উল উলুম ওয়াল হাকাম, পৃ: ২৩৩)“বিদাতে হাসানা” বা উত্তম বিদাত বলে কোন কিছু আছে – এর সপক্ষে তাদের কাছে কেবল একটি প্রমাণই আছে, আর তা হল তারাবীহ সালাত সংক্রান- উমারের(রাঃ) উক্তি: “এটা কতই না উত্তম বিদাত।” (সহীহ আল বুখারী, আল ফাতহ) এছাড়া তারা বলে যে কিছু বিদাত রয়েছে যে সম্পর্কে সালাফগণ কোন আপত্তি তোলেন নি, যেমন কুরআনকে একটি খন্ডের মধ্যে সংকলিত করা এবং হাদীস লেখা ও সংকলন। এক্ষেত্রে বলা যায় এগুলোর ভিত্তি দ্বীনেই রয়েছে, তাই এগুলো আদৌ বিদাত নয়। উমার(রাঃ) বলেছিলেন: “কতই না উত্তম বিদাত।” এখানে বিদাত কথাটিকে শাব্দিক অর্থে নিতে হবে, শরীয়াতের পারিভাষিক অর্থে নয়। দ্বীনের মধ্যে যা কিছুরই ভিত্তি রয়েছে, সেটাকে যদি বিদাত বা নব্য প্রথা বলে আখ্যায়িত করা হয়, তবে সেক্ষেত্রে সেটা শাব্দিক অর্থে বিবেচনা করতে হবে, কেননা শরীয়াতের পরিভাষায় বিদাত হচ্ছে সেটাই যার কোন ভিত্তি ইসলামে নেই। কুরআনের সংকলনের ভিত্তি ইসলামে রয়েছে, কেননা নবীজী(সঃ) কুরআন লেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় সাহাবীগণ একে একটি খন্ডে সংকলন করে এর রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন।
তেমনি নবীজী(সঃ) কিছুদিন তারাবীর নামাযে ইমামতি করেন, কিন্তু সেটা যেন ওয়াজিব হয়ে না যায়, এজন্য তিনি পরবর্তীতে তা থেকে বিরত হন। নবীজীর(সঃ) জীবদ্দশায় ও তাঁর পরও সাহাবীরা একাকী তারাবীহ পড়তেন, যতক্ষণ না ওমর(রাঃ) তাদেরকে একজন ইমামের পেছনে একত্র করে দেন, যেমনটি তাঁরা প্রাথমিক অবস্থায় নবীজীর(সঃ) পেছনে তারাবী পড়তেন। এটা ধর্মীয় ব্যাপারে মোটেও কোন বিদাত নয়। হাদীস লেখার ভিত্তিও ইসলামে রয়েছে। রাসূলুল্লাহ(সঃ) কিছু হাদীস বিশেষ বিশেষ সাহাবীর জন্য লিখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন যখন তাঁর কাছে সেই অনুরোধ করা হয়। তবে সাধারণভাবে তাঁর জীবদ্দশায় হাদীস লেখার অনুমতি ছিল না কেননা তা কুরআনের সাথে মিশ্রিত হয়ে যাওয়ার ভয় ছিল এবং ভয় ছিল কুরআনের মধ্যে এমন কিছু অনুপ্রবেশের যা কুরআনের অংশ নয়। নবীজীর(সঃ) মৃত্যুর পর সে ভয় আর ছিল না কেননা কুরআন নাযিল হওয়া ইতিমধ্যেই পূর্ণতা লাভ করেছিল এবং তাঁর মৃত্যুর পূর্বে এর ক্রমিক বিন্যাস নির্ধারিত হয়েছিল। তাই মুসলিমগণ এর পরবর্তীতে সুন্নাহকে সংরক্ষণ করার জন্য এবং হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য সংকলন করেন। ইসলাম ও মুসলিমদের পক্ষ হতে আল্লাহ তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করুন, কেননা তাঁরা তাঁদের প্রভুর কিতাব এবং নবীজীর(সঃ) সুন্নাহকে হারিয়ে যাওয়া ও বিকৃত হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন।
দ্বিতীয় ভ্রান্ত যুক্তি: বহু দেশের বহু লোকেই এটা পালন করে থাকে:এর জবাবে বলা যায় যে দলীল-প্রমাণ হিসেবে শুধু সেটাই উপস্থাপন করা যাবে যা নবীজীর(সঃ) কাছ থেকে আগত বলে প্রমাণিত হবে, আর নবীজীর(সঃ) কাছ থেকে আগত বলে যা প্রমাণিত, তা হচ্ছে এই যে সকল বিদাতই সাধারণভাবে হারাম, আর এটা নিঃসন্দেহে একটি বিদাত। লোকেদের রীতিনীতি যদি দলীল-প্রমাণ বিরোধী হয়, তবে তা গ্রহণযোগ্য নয়, তা যতসংখ্যক লোকই তা পালন করুক না কেন। আল্লাহ বলেন: “আর আপনি যদি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথা মেনে চলেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করে দেবে…” (সূরা আল আনআম, ৬:১১৬) এতদসত্ত্বেও আলহামদুলিল্লাহ, প্রতি যুগেই এমনসব মানুষ ছিলেন যারা এই বিদাতকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং স্পষ্টত ঘোষণা দিয়েছেন যে এটি বাতিল প্রথা। সত্যকে ব্যাখ্যা করার পরও যারা এটি পালন করতে থাকে তাদের কাছে কোন প্রমাণ নেই।এই উপলক্ষকে যারা প্রত্যাখ্যান করেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন: শাইখুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া(রঃ), তাঁর ‘ইক্বতিদাউস সিরাতিল মুসতাক্বিম’ বইতে; ইমাম আল শাতিবী, আল-ই’তিসামে; ইবনুল হাজ্জ, আল মাদাখিল বইতে; শায়খ তাজুদ্দিন আলী ইবন উমার আল লাখামী, যিনি কিনা এই প্রথার বিরুদ্ধে গোটা একটি বই লিখেছেন; শায়খ মুহাম্মাদ বাশীর আল সাহসাওয়ানী আল হিনদী, তাঁর সিয়ানাতুল ইনসান কিতাবে; সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ রশীদ রিদা এই বিষয়ের ওপর একটি বিশেষ নিবন্ধ লিখেছেন; শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আল আশ-শায়খ এ বিষয়ে বিশেষ নিবন্ধ লিখেছেন; শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায; এবং অন্যান্যরা; যারা এখনও প্রতিবছরই পত্রিকা এবং সাময়িকীতে এসম্পর্কে লিখে যাচ্ছেন এবং একে প্রত্যাখ্যান করে যাচ্ছেন, এমন এক সময়ে যখন এ বিদাত পালিত হচ্ছে।
তৃতীয় ভ্রান্ত যুক্তি: তারা দাবী করে যে তারা মিলাদ পালনের দ্বারা নবীজীর(সঃ) স্মৃতিকে উজ্জ্বল করে রাখছে:এর জবাবে বলা যায় যে মুসলিমরা নবীজীর(সঃ) স্মৃতিকে সর্বক্ষণই উজ্জ্বল করে রাখে, যেমন তাঁর নাম উচ্চারিত হয় আযানে, ইক্বামাতে এবং খুতবায়, ওযুর পর কালেমা শাহাদাৎ পাঠের সময়, সালাতের মধ্যে দুআয় এবং তাঁর নাম উচ্চারিত হওয়ার সময় যখন কিনা দরূদ পাঠ করা হয়, এবং যখনই কোন মুসলিম কোন ওয়াজিব অথবা মুস্তাহাব কাজ পালন করে যা কিনা নবীজী(সঃ) কর্তৃক নির্দেশিত হয়েছে। এই সকল উপায়ে একজন মুসলিম তাঁকে স্মরণ করে এবং সে যে উত্তম কাজটি করে, তার সওয়াব নবীজীও(সঃ) পেয়ে যান। এভাবেই একজন মুসলিম তাঁর স্মৃতিকে সতেজ রাখে এবং জীবনের প্রতিটি দিনে ও রাতেই তাঁর সাথে সংযোগ রক্ষা করে আল্লাহ কর্তৃক অনুমোদিত পন্থায়, শুধু মিলাদের দিন বিদাতী ও সুন্নত বিরোধী প্রক্রিয়ায় নয়; কেননা এর দ্বারা রাসূলের(সঃ) সাথে দূরত্ব কেবল বেড়েই যায় এবং রাসূল(সঃ) এ কারণে তাকে প্রত্যাখ্যান করবেন।বিদাতপূর্ণ উৎসবের কোন প্রয়োজন রাসূলের(সঃ) নেই, কেননা স্বয়ং আল্লাহই তাঁকে শ্রদ্ধেয় ও সম্মানিত করেছেন, যেমনটি তিনি ঘোষণা দেন: “আর আমি তোমার স্মরণকে সমুন্নত করেছি।” (সূরা ইনশিরাহ, ৯৪:৪) আর আযান, ইক্বামত কিংবা খুতবায় এমন কোন সময় আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয়না যখনই তার পরপরই রাসূলের(সঃ) নাম না উচ্চারিত হয়। শ্রদ্ধা, ভালবাসা প্রদর্শন এবং তাঁর স্মৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য এটাই যথেষ্ট, এটাই তাঁকে অনুসরণ করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে উৎসাহব্যঞ্জক।আল্লাহ কুরআনে রাসূলের(সঃ) জন্মকাহিনী আলোচনা করেননি, বরং তিনি তাঁর মিশনের কথা উল্লেখ করেছেন: “যথার্থই আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন যে তিনি তাদের কাছে তাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন…” (সূরা আলে ইমরান, ৩:১৬৪) “তিনিই নিরক্ষর জাতির মধ্য থেকে তাদেরই একজনকে রাসূল বানিয়ে প্রেরণ করেছেন…” (সূরা আল জুমুআহ, ৬৪:২)
চতুর্থ ভ্রান্ত যুক্তি: তারা দাবী তুলতে পারে যে মিলাদুন্নবী উদযাপন একজন জ্ঞানী ও ন্যায়বিচারক রাজার দ্বারা প্রচলিত হয়েছে যিনি এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চেয়েছেন।আমাদের জবাব হচ্ছে বিদাত কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়, তা সে যে কেউই পালন করুক না কেন। ভাল নিয়্যতের দ্বারা কোন খারাপ কাজ করা জায়েয হয় না, আর যদিও বা একজন লোক জ্ঞানী ও সৎকর্মশীল হিসেবে মৃত্যুবরণ করেন, তার মানে এই নয় যে তিনি কোন ভুল করতে পারেন না।
পঞ্চম ভ্রান্ত যুক্তি: তারা দাবী করে মিলাদুন্নবী উদযাপন “বিদাতে হাসানা” বা উত্তম বিদাতের আওতায় পড়ে, কেননা এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নবীজীকে(সঃ) প্রেরণের জন্য আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করা।আমাদের জবাব হচ্ছে: বিদাতের মধ্যে উত্তম বলে কিছু নেই। নবীজী(সঃ) বলেছেন: “যে কেউই আমাদের এই দ্বীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করবে যা এর কোন অংশ নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত হবে।” (বুখারী) এবং তিনি(সঃ) বলেছেন: “প্রতিটি বিদাতই পথভ্রষ্টতা।” (আহমাদ, তিরমিযী)বিদাতের ক্ষেত্রে শরীয়াতের বিধান হচ্ছে এই যে সকল বিদাতই পথভ্রষ্টতার নামান্তর, কিন্তু তাদের ভ্রান্ত যুক্তির কারণে তাদের ধারণা এই যে সব বিদাতই দূষণীয় নয়, বরং কিছু বিদাত আছে যেগুলো উত্তম। শারহুল আরবাঈন বইতে হাফিয ইবনে রজব বলেছেন: “নবীজীর(সঃ) বক্তব্য: ‘প্রতিটি বিদাতই পথভ্রষ্টতা’ একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু ব্যাপক উক্তি যা সবকিছুকেই আওতাভুক্ত করে; এটি দ্বীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি। এটা তাঁর এই বাণীর মত: ‘যে কেউই আমাদের এই দ্বীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করবে যা এর কোন অংশ নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত হবে।’ (বুখারী, আল ফাতহ) যে কেউই এমন নতুন কিছু উদ্ভাবন করে ইসলামের সাথে একে সম্পৃক্ত করতে চায়, যার ভিত্তি এই দ্বীনে নেই, তবে সেটা পথভ্রষ্টতা এবং ইসলামের সাথে এর কোনই সম্পর্ক নেই, তা আক্বীদাহ সংক্রান্তই হোক আর বাহ্যিক বা আভ্যন্তরীণ কথা ও কাজ সংক্রান্তই হোক না কেন।” (জামি’উল উলুম ওয়াল হাকাম, পৃ: ২৩৩)“বিদাতে হাসানা” বা উত্তম বিদাত বলে কোন কিছু আছে – এর সপক্ষে তাদের কাছে কেবল একটি প্রমাণই আছে, আর তা হল তারাবীহ সালাত সংক্রান- উমারের(রাঃ) উক্তি: “এটা কতই না উত্তম বিদাত।” (সহীহ আল বুখারী, আল ফাতহ) এছাড়া তারা বলে যে কিছু বিদাত রয়েছে যে সম্পর্কে সালাফগণ কোন আপত্তি তোলেন নি, যেমন কুরআনকে একটি খন্ডের মধ্যে সংকলিত করা এবং হাদীস লেখা ও সংকলন। এক্ষেত্রে বলা যায় এগুলোর ভিত্তি দ্বীনেই রয়েছে, তাই এগুলো আদৌ বিদাত নয়। উমার(রাঃ) বলেছিলেন: “কতই না উত্তম বিদাত।” এখানে বিদাত কথাটিকে শাব্দিক অর্থে নিতে হবে, শরীয়াতের পারিভাষিক অর্থে নয়। দ্বীনের মধ্যে যা কিছুরই ভিত্তি রয়েছে, সেটাকে যদি বিদাত বা নব্য প্রথা বলে আখ্যায়িত করা হয়, তবে সেক্ষেত্রে সেটা শাব্দিক অর্থে বিবেচনা করতে হবে, কেননা শরীয়াতের পরিভাষায় বিদাত হচ্ছে সেটাই যার কোন ভিত্তি ইসলামে নেই। কুরআনের সংকলনের ভিত্তি ইসলামে রয়েছে, কেননা নবীজী(সঃ) কুরআন লেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় সাহাবীগণ একে একটি খন্ডে সংকলন করে এর রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন।
তেমনি নবীজী(সঃ) কিছুদিন তারাবীর নামাযে ইমামতি করেন, কিন্তু সেটা যেন ওয়াজিব হয়ে না যায়, এজন্য তিনি পরবর্তীতে তা থেকে বিরত হন। নবীজীর(সঃ) জীবদ্দশায় ও তাঁর পরও সাহাবীরা একাকী তারাবীহ পড়তেন, যতক্ষণ না ওমর(রাঃ) তাদেরকে একজন ইমামের পেছনে একত্র করে দেন, যেমনটি তাঁরা প্রাথমিক অবস্থায় নবীজীর(সঃ) পেছনে তারাবী পড়তেন। এটা ধর্মীয় ব্যাপারে মোটেও কোন বিদাত নয়। হাদীস লেখার ভিত্তিও ইসলামে রয়েছে। রাসূলুল্লাহ(সঃ) কিছু হাদীস বিশেষ বিশেষ সাহাবীর জন্য লিখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন যখন তাঁর কাছে সেই অনুরোধ করা হয়। তবে সাধারণভাবে তাঁর জীবদ্দশায় হাদীস লেখার অনুমতি ছিল না কেননা তা কুরআনের সাথে মিশ্রিত হয়ে যাওয়ার ভয় ছিল এবং ভয় ছিল কুরআনের মধ্যে এমন কিছু অনুপ্রবেশের যা কুরআনের অংশ নয়। নবীজীর(সঃ) মৃত্যুর পর সে ভয় আর ছিল না কেননা কুরআন নাযিল হওয়া ইতিমধ্যেই পূর্ণতা লাভ করেছিল এবং তাঁর মৃত্যুর পূর্বে এর ক্রমিক বিন্যাস নির্ধারিত হয়েছিল। তাই মুসলিমগণ এর পরবর্তীতে সুন্নাহকে সংরক্ষণ করার জন্য এবং হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য সংকলন করেন। ইসলাম ও মুসলিমদের পক্ষ হতে আল্লাহ তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করুন, কেননা তাঁরা তাঁদের প্রভুর কিতাব এবং নবীজীর(সঃ) সুন্নাহকে হারিয়ে যাওয়া ও বিকৃত হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন।
তাদেরকে আমরা জবাবে এ কথাও বলতে পারি: যদি শুকরিয়া জানানোই উদ্দেশ্য হয়, যেমনটি তারা দাবী করে থাকে, তবে তিনটি শ্রেষ্ঠ প্রজন্ম, সাহাবী, তাবেঈ ও তাবে তাবেঈ গণের প্রজন্ম, যারা কিনা নবীজীকে(সঃ) সবচেয়ে বেশী ভালবাসতেন এবং সৎকর্ম ও শুকরিয়া আদায়ে সবচেয়ে বেশী অগ্রগামী ছিলেন, তারা কেন এটি পালন করলেন না? যারা মিলাদুন্নবী পালনের এই বিদাত চালু করেছে, তারা কি তাঁদের [তিন প্রজন্ম] থেকে অধিক হেদায়েত প্রাপ্ত? তারা কি আল্লাহর প্রতি অধিকতর শোকরগুজার? অবশ্যই নয়!
ষষ্ঠ ভ্রান্ত যুক্তি: তারা হয়ত দাবী করবে যে মিলাদুন্নবী উদযাপন নবীজীর(সঃ) প্রতি ভালবাসার প্রকাশ, নবীকে ভালবাসা যে কর্তব্য সেটা প্রকাশ করার এটা একটা পন্থা।এর জবাবে বলা যায়: নিঃসন্দেহে নবীজীকে(সঃ) ভালবাসা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য বাধ্যতামূলক, প্রত্যেকের উচিৎ তাঁকে তার নিজের জীবন, তার সন্তান, তার পিতা এবং সকল মানুষ অপেক্ষা বেশী ভালবাসা – আমার পিতা-মাতা তাঁর জন্য উৎসর্গীকৃত হোন – কিন্তু এর মানে এই নয় যে একাজের জন্য আমাদের বিদাতের জন্ম দিতে হবে, যার আদেশ আমাদেরকে দেয়া হয়নি। তাঁকে(সঃ) ভালবাসা মানে তাঁর আনুগত্য ও অনুসরণ করা, কেননা সেটাই ভালবাসার সবচেয়ে বড় পরিচয়, যেমনটি বলা হয়: “যদি তোমার ভালবাসা খাঁটি হয়, তবে তার আনুগত্য কর; কেননা প্রেমিক তার ভালবাসার মানুষের বাধ্য হয়।”নবীজীকে(সঃ) ভালবাসার প্রকাশ ঘটে তাঁর সুন্নাতকে জীবন্ত করা, আঁকড়ে ধরা এবং সুন্নাত বিরোধী কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে। নিসঃন্দেহে তাঁর সুন্নাত বিরোধী যেকোন কিছুই হচ্ছে তিরস্কারযোগ্য বিদাত, এবং তাঁর প্রকাশ্য অবাধ্যতা। মিলাদুন্নবী পালন এবং অন্যান্য বিদাত এর আওতাভুক্ত। ভাল নিয়্যত থাকলেই দ্বীনের মধ্যে কোন বিদাতের অনুপ্রবেশ ঘটানো জায়েয হয়ে যায় না। ইসলাম দুটি বিষয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত: খাঁটি নিয়্যত এবং নবীজীর(সঃ) [সুন্নাতের] অনুসরণ, আল্লাহ বলেন: “হাঁ, যে কেউই সৎকর্মপরায়ণ হিসেবে তার চেহারাকে আল্লাহর নিকট সমর্পণ করবে, তার প্রতিদান তার রবের নিকট রয়েছে, তাদের কোন ভয় নেই, তারা দুঃখিতও হবে না।” (সূরা আল বাক্বারাহ, ২:১১২) চেহারাকে আল্লাহর নিকট সমর্পণ করা অর্থ আল্লাহর প্রতি ইখলাস, আর সৎকর্মপরায়ণতা হচ্ছে নবীজীর সুন্নাতের বাস্তবায়ন।
সপ্তম ভ্রান্ত যুক্তি: তাদের অপর একটি ভ্রান্ত যুক্তি হচ্ছে এই যে মিলাদ উদযাপন এবং এ উপলক্ষে নবীজীর(সঃ) সীরাত আলোচনার দ্বারা মানুষকে তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণের আহবান জানানোই উদ্দেশ্য।তাদের প্রতি আমাদের বক্তব্য হচ্ছে: নবীজীর(সঃ) সীরাত অধ্যয়ন করা এবং তাঁর আদর্শ অনুসরণ করা একজন মুসলিমের সার্বক্ষণিক কর্তব্য, গোটা জীবন ধরে এবং সারা বছরই তাকে তা করতে হবে। এই কাজের জন্য একটি বিশেষ দিনকে বেছে নেয়া, যার পক্ষে কোন দলীল নেই – তা বিদাত, আর “প্রতিটি বিদাতই পথভ্রষ্টতা।” (আহমদ, তিরমিযী) বিদাতের ফসল কেবলই মন্দ, আর এর দ্বারা একজন ব্যক্তি নবীজী(সঃ) থেকে দূরে সরে যায়।
উপসংহারে বলা যায়, মিলাদুন্নবী উদযাপন – তা যে পন্থায়ই হোক না কেন, একটি তিরস্কারযোগ্য নব উদ্ভাবন। মুসলিমদের কর্তব্য এটি সহ অন্যান্য সকল বিদাতের অবসান ঘটানো এবং সুন্নাতকে পুনরুজ্জীবিত করা। এই বিদাতের রক্ষাকর্তা এবং প্রচারকারীদের দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়া ঠিক নয়, কেননা এই লোকগুলো সুন্নাতকে পুনরুজ্জীবিত করার পরিবর্তে বিদাতকে জীবন- রাখতেই বেশী আগ্রহী; এদের কেউ কেউ আছে যারা সুন্নাতের প্রতি মোটেও ভ্রুক্ষেপ করে না। কেউ যদি এরকম হয়, তবে তার অনুকরণ ও অনুসরণ জায়েয নয়, অধিকাংশ লোক এই প্রকৃতির হলেও নয়। বরং আমাদের ধার্মিক পূর্বপুরুষ এবং তাদের অনুসারীদের মধ্যে তাদের দৃষ্টান্তই আমরা অনুসরণ করব, যারা সুন্নাতের পথে চলেছেন, তাদের সংখ্যা কম হলেও। কোন মতের পক্ষে মানুষের সংখ্যাধিক্য দ্বারা মতের সত্যাসত্য যাচাই হয় না, বরং যা সত্য সেটার আলোকে মানুষকে যাচাই করতে হবে।
সপ্তম ভ্রান্ত যুক্তি: তাদের অপর একটি ভ্রান্ত যুক্তি হচ্ছে এই যে মিলাদ উদযাপন এবং এ উপলক্ষে নবীজীর(সঃ) সীরাত আলোচনার দ্বারা মানুষকে তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণের আহবান জানানোই উদ্দেশ্য।তাদের প্রতি আমাদের বক্তব্য হচ্ছে: নবীজীর(সঃ) সীরাত অধ্যয়ন করা এবং তাঁর আদর্শ অনুসরণ করা একজন মুসলিমের সার্বক্ষণিক কর্তব্য, গোটা জীবন ধরে এবং সারা বছরই তাকে তা করতে হবে। এই কাজের জন্য একটি বিশেষ দিনকে বেছে নেয়া, যার পক্ষে কোন দলীল নেই – তা বিদাত, আর “প্রতিটি বিদাতই পথভ্রষ্টতা।” (আহমদ, তিরমিযী) বিদাতের ফসল কেবলই মন্দ, আর এর দ্বারা একজন ব্যক্তি নবীজী(সঃ) থেকে দূরে সরে যায়।
উপসংহারে বলা যায়, মিলাদুন্নবী উদযাপন – তা যে পন্থায়ই হোক না কেন, একটি তিরস্কারযোগ্য নব উদ্ভাবন। মুসলিমদের কর্তব্য এটি সহ অন্যান্য সকল বিদাতের অবসান ঘটানো এবং সুন্নাতকে পুনরুজ্জীবিত করা। এই বিদাতের রক্ষাকর্তা এবং প্রচারকারীদের দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়া ঠিক নয়, কেননা এই লোকগুলো সুন্নাতকে পুনরুজ্জীবিত করার পরিবর্তে বিদাতকে জীবন- রাখতেই বেশী আগ্রহী; এদের কেউ কেউ আছে যারা সুন্নাতের প্রতি মোটেও ভ্রুক্ষেপ করে না। কেউ যদি এরকম হয়, তবে তার অনুকরণ ও অনুসরণ জায়েয নয়, অধিকাংশ লোক এই প্রকৃতির হলেও নয়। বরং আমাদের ধার্মিক পূর্বপুরুষ এবং তাদের অনুসারীদের মধ্যে তাদের দৃষ্টান্তই আমরা অনুসরণ করব, যারা সুন্নাতের পথে চলেছেন, তাদের সংখ্যা কম হলেও। কোন মতের পক্ষে মানুষের সংখ্যাধিক্য দ্বারা মতের সত্যাসত্য যাচাই হয় না, বরং যা সত্য সেটার আলোকে মানুষকে যাচাই করতে হবে।
নবীজী(সঃ) বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে যারা জীবিত থাকবে, তারা বহু বিভক্তি দেখতে পাবে। আমি তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছি আমার এবং আমার পরবর্তী সঠিক পথপ্রাপ্ত খলীফাদের সুন্নাতের অনুসরণ করার। শক্তভাবে একে আঁকড়ে ধরে থাক। [দ্বীনের মধ্যে] নব উদ্ভাবিত বিষয় সম্পর্কে সাবধান থাক, কেননা প্রতিটি বিদাতই পথভ্রষ্টতা।” (আহমাদ, ৪/১২৬ দ্বারা বর্ণিত; আল তিরমিযী নং। ২৬৭৬). সুতরাং নবীজী(সঃ) এই হাদীসে আমাদেরকে শিখিয়েছেন যে মতভেদের ক্ষেত্রে কি করতে হবে, যেমনটি তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে তাঁর সুন্নাত বিরোধী যেকোন কথা বা কাজই বিদাত এবং প্রতিটি বিদাতই পথভ্রষ্টতা।
যখন আমরা দেখতে পাই যে মিলাদুন্নবী উদযাপনের কোন ভিত্তি নবীজীর(সঃ) অথবা খুলাফায় রাশিদীনের সুন্নাতে নেই, তার অর্থই হচ্ছে এটা নব উদ্ভাবিত, বহু বিদাতের একটি, যা মানুষকে পথভ্রষ্ট করে। এই মূলনীতিই হাদীস থেকে লব্ধ এবং নিম্নোক্ত আয়াতে নির্দেশিত: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, তাঁর রাসূল এবং তোমাদের মধ্যে যারা দায়িত্বশীল, তাদের আনুগত্য কর। যদি তোমরা কোন বিষয়ে মতবিরোধে উপনীত হও, তবে তার সিদ্ধান- আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাসী হয়ে থাক। এটাই উত্তম এবং পরিণতিতে সবচেয়ে সুন্দর।” (সূরা আন নিসা, ৪:৫৯) এই আয়াতে আল্লাহর ওপর ছেড়ে দেয়া অর্থ হচ্ছে কুরআনের ওপর ছেড়ে দেয়া, আর রাসূলের(সঃ) দিকে ফিরিয়ে দেয়া অর্থ হচ্ছে তাঁর মৃত্যুর পরে সুন্নাতের ওপর ছেড়ে দেয়া। মতবিরোধের ক্ষেত্রে কুরআন এবং সুন্নাহই হচ্ছে সত্যাসত্যের মাপকাঠি। কুরআন বা সুন্নাহতে কোথায় ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে ইসলাম মিলাদুন্নবী উদযাপনকে উৎসাহিত করে? যারাই মনে করছে যে এটা ভাল কিছু, তাদেরকে অবশ্যই এর জন্য এবং সকল বিদাতের জন্য আল্লাহর নিকট তওবা করতে হবে। সত্যের সন্ধানী একজন মুসলিমের জন্য এটাই হচ্ছে সঠিক আচরণ। কিন্তু প্রমাণ পাওয়ার পরও যে উদ্ধত হবে ও গোঁড়ামী করবে, তবে সেক্ষেত্রে তার হিসাব-নিকাশ হবে তার রবের সাথে। আমরা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই তাঁর সাথে সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত তাঁর কিতাব ও তাঁর রাসূলের সুন্নাতকে আঁকড়ে থাকার ব্যাপারে। কল্যাণ ও শান্তি বর্ষিত হোক আমাদের নবীজী মুহাম্মাদ(সঃ) এবং তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীগণের ওপর।
Translated into English
We usually observe many muludunnabi to know whether this muldunnabi is acceptable or not.
Provision of observance of Miladunnabi:
Author: Shaykh said. Saleh ibn Fawzan al-Fawzan
Praise be to Allah, the Lord of the worlds, the peace, and blessings of our Prophet Muhammad (peace be upon him) and his family and companions.
The Qur'an and the Sunnah have very clearly been directed to follow the instructions of Allah and His Messenger, and to start something new in religious matters is forbidden. Allah (SWT) says: "Say [O Prophet]: If you truly love God, then follow me, then God will love you and forgive your sins." (Surah Al-Imran, 5:65) "To you. Follow what has been revealed to you from your Lord, and follow Him [the Qur'an and the Sunnah], and ask Him to associate with Allah [any other] entity. Y] Do not follow… ”(Surah Al-A'raaf, 3: 8)" And this is my right path, so follow this path and do not go the other way, because those paths will separate you from His path. "( Surah Al-An'am (1: 1) and the Prophet (peace be upon him) said: "The most truthful speech is the Book of Allah, and the greatest direction is the guidance of Muhammad, and the worst thing is (about religion) the new manifestation." And he (PBUH) says: "Whoever will invent something new in this religion which is not a part of it, it will be rejected." (Bukhari and Muslim) Another tradition in the Muslim Shari'ah came: "Whoever does something like this That does not match our religion, but it will be rejected. ”
One of the most inventive new inventions invented by man is the celebration of the birth or birth anniversary of the Prophet (peace be upon him) in the month of Rabiul Awal. People celebrate the occasion in different ways: Some gather on this occasion to discuss the events of the Prophet's birth and read the sermon and the Qasida. Make or distribute someone or sweet meal. Some celebrate it in the mosque, some celebrate it or at home. Some leave it all and gather in such gatherings forbidden and malicious acts: such as the association of women and men, dancing and singing, and various shirky acts such as seeking the help of prophets, Call him and seek his help against the enemy, etc. Regardless of the nature of the celebration and the intention of the observant, there is no doubt that this event was followed by the passing of the first three great generations of the fidelity of Shiites to destroy the religion of Islam. The first of these celebrates the first Miladunnabi at the end of the sixth century Hijri and the beginning of the seventh century, according to Ibn Khalaqan and other historians, as described by al-Muzaffar Abu Sa'id Kawakaburi, Emperor of Irbil. Abu Shama says: Sheikh Omar ibn Muhammad al-Mala, who was a well-known religious man, first introduced it in Mosul. Later the Emperor of Irbil and others followed his example.
Al-Bida'ah writes in writing about Al-Hafiz ibn Qasir Abu Sa'id Kawakaburi in the book of Nihayyah: "He used to celebrate Milad in the month of Rabiul Awal, and organized a huge festival on this occasion". They adorned the domes in various dazzling decorations, with singers, puppets dancing and bandits in each dome. Law was, and could not be excluded from the dome. People used to skip activities and watch the festival. Just like two days before the Milad, they used to bring a lot of camels, cows, and sheep, which, as described, brought them to the palace with drums, music, and music… Nashid lessons of poets were held in the night of Milad. " In recent times, this Vidat has included useless decoration, excessive decoration, and waste of money and time, about which Allah has not sent down any decree. Muslims should revive the Sunnah and terminate this Vidat unless Allah knows their provision in any matter. Not to do that.
Provision of Shariah regarding the celebration of Miladunnabi:
Celebrating Miladunnabi is haram and abandoned for several reasons:
The first reason: It was not circumcision of the Prophet (peace be upon him) or his caliph. As a result, this is a forbidden new invention, because the Prophet (peace be upon him) said: "I urge you to follow me and my rightly guided caliph; You hold it tight. Beware of the newly invented things [in the religion], because every new thing is Bidat, and every Bidat is a misguidance.". If someone does something that the Prophet (peace be upon him) did not say or do, and his successor did not do so to gain closeness to God, it would mean that he is claiming that the Prophet (peace be upon him) did not fully explain religious rituals to the people. As a result, he rejects this verse of God: "Today I have fulfilled your religion for you." (Surah Al-Ma'idah, 3: 1) O The din is adding something extra and claiming that it is part of religion, but the Messenger (peace be upon him), it [from God] did not bring.
Second reason: Mil